April 30, 2024, 7:10 pm

যশোরে রেকর্ড সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী অনুপস্থিত বহিষ্কার -১

যশোরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদ পূরণে অনুষ্ঠিত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশ নেননি। শুক্রবার অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ৮ হাজার ১৪৪ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ব্যাপক সংখ্যক পরীক্ষার্থী কেন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেননি তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফার নিয়োগ পরীক্ষায় যশোরে সর্বমোট ২৮ হাজার ৫৫ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। এদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৯ হাজার ৯১১ জন।
এদিকে, ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়ার অপরাধে যশোর সরকারি এমএম কলেজের নতুন বিজ্ঞান ভবন কেন্দ্রের ১০৫ নম্বর কক্ষ থেকে এক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীর নাম জাহিদ হাসান। পিতার নাম দাউদ হোসেন। বাড়ি যশোর সদর উপজেলার নওদা গ্রামে। অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে জাহিদ হাসানকে বহিষ্কার করা হলেও রাত সাড়ে আটটায় এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছিল। বদলি হওয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জেল হোসেন খান বলেন,‘পুলিশ ছেলেটিকে নিয়ে গেছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। দেখি কারা বাদী হয়।’ যদিও দেশের বিভিন্ন জেলায় এই অপরাধে আটকদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে। সর্বোচ্চ একমাস থেকে সর্বনিম্ন ১০ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে ডিভাইস ব্যবহারকারীদের। যদিও যশোরে তার কোনোটাই করা হয়নি বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আশঙ্কাজনকহারে পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে কারণ অনুসন্ধানেরও দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।
যশোরের এক হাজার ২৮৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর জেলার আট উপজেলা থেকে সর্বমোট ২৮ হাজার ৫৫ পরীক্ষার্থী আবেদন করেন। শহর ও শহরতলির ৩৮ টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যেসব কেন্দ্রে সহকারী শিক্ষকের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তার মধ্যে যশোর সরকারি সিটি কলেজের কলা ভবন কেন্দ্রে ৬০০,সরকারি সিটি কলেজ বিজ্ঞান ভবনে ৫৩০, হামিদপুর আল-হেরা কলেজে ৬০০, কালেক্টরেট স্কুলে ৭০০, মধুসূদন তারা প্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে ৫৫০, আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসায় ৬০০, আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমিতে ৫০০, ইসলামিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০০, সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে ৭০০, জিলা স্কুলে ১০৬৪, যশোর কলেজে ১১০০, এমএম কলেজের আব্দুল হাই কলা ভবনে ৯০০, এমএম কলেজ একাডেমিক ভবনে ৫৪২, এমএম কলেজ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবনে ৬৭৬, এমএম কলেজের পুরাতন বিজ্ঞান ভবনে ৫৫৮, এমএম কলেজের নতুন বিজ্ঞান ভবনে ৭২৪, বাদশাহ ফয়সাল ইসলামী ইনস্টিটিউটে (ঈদগাহ) ৫০০, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮০০, মুসলিম একাডেমিতে ৫১২, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের আলী রেজা রাজু ভবনে ১১৭২, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের এসএম কামাল উদ্দীন ভবনে ৫৪২, মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭২২, সরকারি মহিলা কলেজের কলা ভবনে ৭০০, সরকারি মহিলা কলেজের বিজ্ঞান ভবনে ৮৪০, ক্যান্টনমেন্ট কলেজের নজরুল ভবনে ১৪০০, ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মাইকেল মধুসূদন ভবনে ১১৫০, ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অনার্স বিল্ডিংয়ে ৫০০, পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭১৬, সেবাসংঘ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪০০, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ৮০০, শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে ১২৩৫, উপশহর মহিলা ডিগ্রি কলেজে ১০০০, বাদশাহ ফয়সাল ইসলামী ইনস্টিটিউটে (আবাসিক) ৭৬২, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-১ এর একাডেমিক ভবন, ড্রইং ভবন, সিভিল ভবন, মেকানিক্যাল ভবন ও প্রাইমারি স্কুল ভবনে ৬৫০, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-২ এর কম্পিউটার ভবন, অডিটোরিয়াম ভবন ও পাওয়ার ভবনে ৮৬০, উপশহর কলেজে ৬০০, নিউটাউন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮০০ এবং যশোর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ৫৫০ জন পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা ছিল।
কিন্তু শুক্রবার পরীক্ষার দিন ব্যাপক সংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১৪৪।
এদিকে, আটক পরীক্ষার্থীর বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে একেকজন একেক কথা বলেন। ওই কেন্দ্রে থাকা সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন,‘আমি উত্তরপত্র নিয়ে চলে এসেছিলাম। শেষে কী হয়েছে বলতে পারবো না।’
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক রাতে বলেন,‘মামলার প্রস্তুতি চলছে। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ মামলা করবে।’
এমএম কলেজ নতুন বিজ্ঞান ভবন কেন্দ্র সচিব প্রফেসর মদন কুমার সাহা বলেন,‘মামলা করবে পুলিশ। তারা যেসব কাগজপত্র চেয়েছে আমরা তা সরবরাহ করছি। বিষয়টি অধ্যক্ষ মহোদয় জানেন।’
এদিকে, ডিভাইস ব্যবহারকারী পরীক্ষার্থী জাহিদ হাসান আটক হলেও বাইরে থেকে তাকে যারা সহযোগিতা করছিলেন তাদের আটকের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখনই তাদের সহযোগিতাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :